শর্ত না মানলে আবাসের টাকা পাবেন না
পঞ্চায়েত ভোটের আগে ফের বিপাকে ফেলার ছক!
শর্ত মানলেও আবাসে ৮ হাজার
কোটি দিতে টালবাহানা কেন্দ্রের
কলকাতা: ১০০ দিনের কাজের পর এবার আবাস প্লাস! কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বরাদ্দ নিয়ে ফের টালবাহানা মোদি সরকারের। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে সুকৌশলে বাংলাকে ‘ভাতে মারতে’ ছক কষা হচ্ছে বলে উঠছে অভিযোগ। আবাস প্লাস নিয়ে প্রথমে একগুচ্ছ কড়া শর্ত চাপিয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু বাংলাকে বেকায়দায় ফেলা যায়নি। নির্দিষ্ট মধ্যেই যাবতীয় শর্ত পূরণ করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। বাড়ি তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ১১ লক্ষ উপভোক্তাকে। কোনও প্রশ্ন পর্যন্ত তোলেনি মোদি সরকার। তা সত্ত্বেও পাঠানো হচ্ছে না কেন্দ্রের ভাগের বরাদ্দ ৮ হাজার কোটি টাকা। অন্তত এক সপ্তাহ আগে তা চলে আসার কথা ছিল। কিন্তু এক্ষেত্রে নিজেদের বেঁধে দেওয়া শর্ত ভেঙেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন? কোনও জবাব মেলেনি। এদিকে হাতে আর মাত্র আড়াই মাস সময়। অর্থবর্ষ শেষের আগেই শেষ করতে হবে এই বিপুল সংখ্যক বাড়ি নির্মাণের কাজ। ফলে গ্রামবাংলায় তৈরি হয়েছে অভূতপূর্ব সঙ্কট।
গত বছর ২৪ নভেম্বর, প্রায় আট মাস দেরিতে বাংলাকে মোট ১১ লক্ষ ৩৬ হাজার ৪৮৮টি বাড়ি নির্মাণে টার্গেট দেয় কেন্দ্র। একইসঙ্গে বেঁধে দেওয়া হয় ছ’দফা শর্ত। তার মধ্যে অন্যতম—ট্রেজারি থেকে অর্থ অনুমোদনের এক সপ্তাহের মধ্যে সরাসরি প্রত্যেক উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রথম কিস্তির টাকা পাঠাতে হবে রাজ্যকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাড়ি তৈরির অনুমোদন দেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে ৩১ ডিসেম্বর। তারপর প্রায় দু’সপ্তাহ কাটতে চলেছে। রাজ্যের ভাগের ৪,৮০০ কোটি টাকা তৈরি রেখেছে অর্থদপ্তর। কিন্তু কেন্দ্রের ভাগের ৬০ শতাংশের (৮,২০০ কোটি) এক নয়া পয়সাও ছাড়া হয়নি। পুরনো আবাস যোজনার এক হাজার কোটি টাকা হাতে রয়েছে রাজ্যের। কিন্তু কেন্দ্র সেই পোর্টাল ‘ব্লক’ করে রাখায় ওই অর্থ ব্যবহার করে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। ফলে চলতি অর্থবর্ষের মধ্যে ১১ লক্ষ বাড়ি তৈরি কাজ শেষ করা নিয়েই সংশয়ে বিভিন্ন মহল।
রাজ্য সরকারের এক কর্তা জানান, কেন্দ্র নিজের ভাগের টাকা ছাড়ার পরেই একমাত্র একাজ সম্ভব। নচেৎ যাচাইপর্ব চালিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই ৯৫ শতাংশ উপভোক্তার নাম চূড়ান্ত তালিকায় তোলাই সার হবে। আবাস প্লাস প্রকল্পের বাড়ি তৈরি করা যাবে না। বিষয়টি উল্লেখ করে ইতিমধ্যে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রককে চিঠি পাঠিয়েছে নবান্ন। কোনও উত্তর আসেনি। এপ্রসঙ্গে রাজ্যের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘এ তো সুকৌশলে রাজ্যকে বেকায়দায় ফেলার ফন্দি মনে হচ্ছে। এমন হলে রাজ্যও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।’ চলতি মাসের শুরুতে আবাস প্লাসের তালিকা যাচাইয়ের কাজ খতিয়ে দেখতে মালদা ও মুর্শিদাবাদে এসেছিল কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। তাদের রিপোর্টের অজুহাত দেখিয়েই কি আটকে রাখা হয়েছে টাকা? এই প্রশ্ন এখন ঘোরাফেরা করছে প্রশাসনিক মহলে।
একজন উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা যায় তিন কিস্তিতে। সেই নিয়ম ব্যাখ্যা করে এক আধিকারিক জানিয়েছেন, রাজ্যে আবাস প্রকল্পের জন্য একটি নোডাল ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আছে। সেখানেই কেন্দ্র এবং রাজ্যের অংশের টাকা জমা পড়ে। রাজ্যের অর্থদপ্তর এই নোডাল আকাউন্টে নিজের ‘ম্যাচিং ফান্ড’ পাঠানোর জন্য ফাইল তৈরি রেখেছে। কেন্দ্র টাকা ছাড়লেই তা পাঠানো হবে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন